সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ১১-২০ গ্রেড খুবই শোচনীয় অবস্থা পার করছে। প্রতিবছর মূল্যস্ফিতির হার গড়ে প্রায় ৬% যেখানে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পায় মাত্র ৫% ফলে প্রতিবছর প্রায় ১% ঘাটতি থাকায় গত ৬ বছরে ৬% নেগেটিভ এ চলে গেছে কর্মচারীদের বেতন ভাতা। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও বাড়িভাড়া মূল্যের সাথে বেতন ভাতা দিন দিন অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাজারের সাথে কোনভাবে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন ভাতা দৌড়ে পেরে উঠছে না। তাছাড়া জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধির সাথে সাথে মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে অক্ষম হয়ে পড়ছে কর্মচারীদের আয়।
তবে পদোন্নতি বৈষম্য, টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড বহাল, গ্রেড ব্যবধান কমালে অবশ্যই কর্মচারীদের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতে ঋণের বোঝা মাথায় নিতে হতো না। ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীগণ যে পরিমান বেতন পান তাতে সংসার চালাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে, প্রয়োজন মেটাতে তাদের ঋণের দারস্থ হতে হচ্ছে। পে স্কেলের সংস্কারের জন্য ২০১৭ সালে কমিটি গঠন করা হলেও তা আলোর মূখ দেখেনি। জাতীয় বেতন স্কেল সংস্কার করে ১০টি গ্রেডে আনয়ন করা হলে, গ্রেড ব্যবধানে সমতা আনয়ন করা হলে মোট কথা কর্মচারীদের ৭ দফা দাবী অর্থাৎ নিম্নোক্ত দাবীগুলো পূরণ করা হলে তাদের ব্যাংক বা এনজিওগুলোর দারস্থ হয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাত পার করতে হতো না।
৭ দফা দাবী সমূহ
) জাতীয় স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন পূর্বক বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ১৯৭৩ সনের ১০ ধাপে ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের পার্থক্য ১:৫ হতে হবে। পূর্বের ন্যায় শতভাগ পেনশন প্রথা পূনঃবহাল করতে হবে।
২) এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি চালুসহ সচিবালয়ের ন্যায় সচিবালয়ের বাহিরের সরকারী কর্মচারীদের পদ ও বেতন বৈষম্য দুর করতে হবে। ব্লক পোষ্টধারীদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
৩) আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল পূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে হস্থান্তর করতে হবে। বিভিন্ন দপ্তর/প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন খাতে কর্মরত কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। ডাক বিভাগের প্রার্থী প্রথা চালুসহ মাস্টার রোল ও অন্যান্য দপ্তররে কর্মরত মাস্টার রোল, কন্টিজেন্স ও ওয়ার্কচার্জ কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে।
৪) সরকারি কর্মচারিদের পূর্বের ন্যায় ৩টি টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড ও বেতন সমতাকরণ পূনঃবহাল করতে হবে। জীবন যাত্রার মান সমুন্নত রাখার স্বার্থে ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এবং দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধোগতির বিষয় বিবেচনা করে পেনশনের হার ৯০% থেকে ১০০% ও গ্রাইচ্যুইটির হার ১ টাকায় দুইশত এিশ (২৩০) টাকার স্থলে চারশত (৪০০) টাকায় উন্নীত করণ করতে হবে।
৫) ৯ম পে স্কেল প্রদানের পূর্ব পর্যন্ত দ্রব্য মূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধো গতির বিষয় বিবেচনা করে ৫০% মহার্ঘ ভাতা দিতে হবে।
৬) প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত কর্মচারীদের ন্যায় ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের সরকারি কর্মচারিদের বিনা সুদে ৩০ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ দিতে হবে ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের যোগদানের দিন থেকে সিনিয়রিটি পাওয়ার জন্য করা রীট মামলার মহামান্য হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারীকৃত আদেশ অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৭) চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর এবং অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬২ বছর করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষকদের ন্যায় অন্যান্য সকল দপ্তরে পোষ্য কোটা চালু করতে হবে।
উপরোক্ত দাবীগুলো সরকারের নিকট বারবার উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং সংসদে এ বিষয়ে বারংবার আলোচনা হলেও সরকার সে বিষয়ে কোন বক্তব্যই পরিস্কার করছে না। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ বাস্তবায়নের ৬ বছর পূর্ণ হয়ে গেলেও নতুন পে স্কেল বা ৯ম পে স্কেলের কোন ঘোষনার আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের হাহাকার বা কান্নার শব্দই কেবল ভেসে বেড়াচ্ছে।
জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থতিতে সংসদ সদস্য কর্তৃক আপত্তি বা বৈষম্যগুলো তুলে ধরা হলেও সরকারের উর্ধ্বতন মহল বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা কর্তৃপক্ষের নিকট হতে ৯ম পে স্কেল ঘোষনা বা ৭ দফা দাবীর কোন একটিও আমলে নেয়ান বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করা হয়নি। তবে কর্মচারীদের ৭ দফা দাবী আদায়ে তারা তাদের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে সক্রিয়া আছেন এবং ফিজিক্যাল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকুরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরাম ৭ দফা দাবী আদায়ে তাদের আন্দোলন সক্রিয় রাখবেন বলেও ঘোষণা করে যাচ্ছেন এবং সংগঠনগুলো দাবী আদায়ে কঠোর কর্মসূচীর ঘোষনা করবেন কোভিড সিচুয়েশন কাটিয়ে উঠার পর। দাবী আদায়ে একধাপ আগালেও করোনা পরিস্থিতি বারবারই আন্দোলনকে লঘু বা হালকা করে দিচ্ছে। আন্দোলন সর্বোচ্চ মাত্রায় গতি পেলে অবশ্যই ৭ দফা দাবী আদায় হবে বলে আশা করছেন সংগঠনগুলো।
0 Comments