রাবি ছাত্রলীগ নেতা সুস্ময়ের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

 


ময়মনসিংহ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের পরিবহন ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’র কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। ছোটভাইদের নিয়ে মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে নেয়া হয় এ টাকা। ভর্তিপরীক্ষা চলাকালে (২৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুলের মাঠে এ ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনায় ভুক্তভোগীর নাম আলী আজম তুহিন। তিনি ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস’র পরিচালক। ভার্সিটি এক্সপ্রেস ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন ভর্তি কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের বাসে রাবিতে আসার ব্যবস্থা করে থাকে। আর ঘটনার মূল অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম সাবরুন জামিল সুস্ময়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু সাথে রাজনীতি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১০-১১ সেশনের এ শিক্ষার্থী মাস্টার্স শেষ করেছেন ২০১৮ সালে।

এছাড়াও ময়মনসিংহ জেলা সমিতির কয়েকজন নেতার নামও উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী। তাদের মধ্যে আছেন, জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম, ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী তুর্য, ধ্রুব। ঘটনার সময় আরও বেশ কয়েকজন থাকলেও চিনতে পারেন নি ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও সরবরাহ করা কল রেকর্ড ও বিকাশ ট্রানজেকশন বিল ঘেঁটে দেখা গেছে,
একটি নাম্বারে ২৫ জুলাই বিকেল ৩.১১ মিনিটে ১০ হাজার এবং অন্য একটিতে একই দিন বিকেল ৫.৫২ মিনিটে ১০ হাজার ২০০ টাকা মিলিয়ে মোট ২০ হাজার ২০০ টাকা আদায় করেছেন অভিযুক্তরা। অভিযুক্তের সাথে ভুক্তভোগীর হওয়া একটি কল রেকর্ড ও বিকাশ ট্রানজেকশন বিল প্রতিবেদকের কাছে আছে।


ভুক্তভোগীর অভিযোগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষার মোট ২৪ টি বাসে ময়মনসিংহ থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে আসেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল স্কুলের মাঠে পার্কিং করা বাসে লাগানো ব্যানার থেকে নাম্বার নিয়ে টিকেটের কথা বলে ডাকা হয় তাকে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীরা বাসে আসা-যাওয়া করতে থাকায় নিজে না গিয়ে হৃদয় নামের তার এক কর্মচারীকে পাঠান।
হৃদয়কে জিম্মি করে, মিষ্টি খাওয়ার জন্য তার কাছে ২৪ হাজার টাকা দাবি করেন অভিযুক্ত। শেষ পর্যন্ত ২৪ বাসের জন্য ১২ হাজার টাকা দাবি করেন সুষ্ময়। সেসময় ১০ হাজার টাকা দিয়ে পার পেলেও একইদিন (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় তার ১৪ নাম্বার বাসটি রাজশাহী আসার পথে সমস্যা সৃষ্টি করেছে দাবি করে তার কাছ থেকে আরও ১০ হাজার ২০০ টাকা আদায় করেছেন অভিযুক্ত।

আলী আজম তুহিন বলেন, ” সেদিন (২৫ তারিখ) আমাদের ১৪ টা বাস যায়। দুপুর আমাকে একজন ফোন করে ময়মনসিংহ যাওয়ার টিকেট চেয়ে আমার সাথে দেখা করে। পরে স্টুডেন্টদের সাথে দেখা করার কথা বলে কালোশার্ট পড়া (পরে নাম জানতে পারলাম সুষ্ময়) আমার বাসের একজন স্টাফকে মোটর সাইকেলে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাকে আটকে রেখে আমার কাছে ২৪ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। সেসময় ১০ হাজার টাকায় মিটমাট হলেও বিকেল ৫ টার দিকে এসে বাস আসার সময় সমস্যা করেছে বলে ভাংচুর করার হুমকি দিয়ে আরও ১০ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুকে জানালে তিনি আমার কাছে তার নাম্বার চান। আমি নাম্বার ম্যাসেজ করে দিয়েছি। পরে আর কিছু জানান নি।”

অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা সুষ্ময় বলেন,” অসম্ভব। ভার্সিটির সাথে আমার যোগাযোগই নাই কতদিন থেকে। ২০১৮ সালে আমি মাস্টার্স করে বের হয়েছি, তারপর থেকে আমার কোনো যোগাযোগই নাই ক্যাম্পাসের সাথে। এখানে কোথাও ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। এটা অন্য কেউ করতে পারে, আমি এব্যাপারে কিছুই জানি না। আমি ১০-১৫ দিন থেকে বাসায়। ২০ তারিখের দিকে এসেছি।”

তবে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদারবক্স হলের ৩১৮ নম্বর রুমে ছিলেন ২৪ তারিখ রাতে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, “তাদের অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত নই। অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণসহ জানালে আমরা তাদেরকে(অভিযুক্তকে) ডেকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।”

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, সে (সুষ্ময়) পড়াশোনা শেষ করে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। সেদিন আমার সাথে দেখা হয়নি। এধরণের কিছু হয়ে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিব।


Post a Comment

0 Comments