"দ্যা চেঞ্জ মেকার অব রাজশাহী"

আজ থেকে ১৫বছর আগের অর্থাৎ ২০০৮ সালের রাজশাহী শহর ও বর্তমানের রাজশাহী শহর অনেক পার্থক্য দেখা যায়।তখন শহরের রাস্তাঘাট ভাংগাচোরা,পানীয় জলের অভাব,শহররক্ষা বাধ অত্যন্ত নাজুক ও বিপদজনক, সবঋতুতে নগরীতে ধুলা বালিতে একাকার, শহরের শিক্ষাব্যবস্হা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। নগরীতে বহুতল ভবন সেরকম নেই। শ্রমজীবি মানুষ শুধু পায়ে চালানো রিকশা মাধ্যম ছাড়া কাজ নেই বললেই চলে। শহরের গাছপালা অত্যন্ত কম ছিলো। বিদ্যুৎ ব্যবস্হা ভালো ছিলো না। এরকম সময় এ শহরে নগরপিতা হয়ে আসলেন এক হামিলটনের বাঁশিওয়ালার যার নাম এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। 

তিনি এসে শহরের সব সমস্যা গুলো চিহ্নিত করলেন। তিনি ভাবলেন সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে উত্তম নাগরিক সেবা দেয়া সম্ভব না। এ জন্য তিনি সমন্বিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের উপর জোর দেন। তিনি পানিউন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে শহর রক্ষা বাধ নির্মাণের পাশাপাশি সুপরিকল্পিতভাবে গাছ লাগানো শুরু করলেন। ফলে কয়েকবছরের মধ্যে পদ্মা চরে সেই ধুলিকনার প্রকোপ একেবারে কমে এলো।ফলস্বরূপ ২০১৬ সালে লন্ডনের দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকায় বিশ্বের কমধুলিকনা মুক্ত শহর হিসেবে স্বীকৃতি পেল। ২০১১ সালের পুর্বে রাজশাহী নগরীতে দিনের বেলায় আবর্জনা পরিস্কার হতো। ফলে স্কুল/কলেজগামী ছাত্রদের সকাল বেলা ঝাড়ু দেয়ার ফলে জামাকাপড় ভালো থাকতো না এবং বাসাবাড়ি আবর্জনা সহ ময়লাগাড়ী দিনে চলাচলের ফলে শহরের সকালের পরিবেশ ভালো থাকতো না। এ অবস্থা থেকে তিনি রাত্রিকালীন রাস্তা ঝাড়ু সহ বাসাবাড়ির আবর্জনা অপসারণ সম্পুর্ন রাতে ব্যবস্থা করলেন। ফলে সকালে প্রাতঃভ্রমণ সহ স্কুল কলেজের ছাত্রদের সকালে নির্মল পরিবেশে যাতায়াত করতে পারলো। নগরবাসীর পানি সমস্যা কথা বিবেচনা নিয়ে২০১২সালে রাজশাহী ওয়াসা প্রতিষ্ঠা করে রাজশাহী নগরীর পানি সমস্যা দূর করেন। এ ছাড়া ২০১৩ সালে বাসাবাড়ি সহ বিসিক এলাকায় গ্যাস প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১২ সালের মধ্যে নগরীর রাস্তা ঘাট উন্নতির ফলে বাংলাদেশে প্রথম শহর যা এ নগরীতে ব্যাটারিচালিত বিশহাজার রিক্সা/ অটোরিকশা লাইসেনস প্রদানের মাধ্যমে কর্মের সংস্হান করেন। ২০১২ ----- ২০১৩ সনে রাজশাহী মহানগরী দেশে একটা সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর নগরী হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে পেরেছিল। ২০১২-১৩অর্থবছর শেষের দিকে রাজশাহী মহানগরী সড়ক পথ প্রসস্হকরনের জন্য দুটি বৃহত পরিসরে প্রকল্প প্রনয়ণ কাজ শেষ করে স্হানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবমিট করা হয়। প্রকল্পগুলো হলো রাজশাহী মহানগরীর গুরত্বপূর্ন রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্প ও রাজশাহী মহানগরীর কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী পর্যন্ত সড়ক প্রসস্হকরন প্রকল্প। ২০১৩ সালে ২০১৮ পর্যন্ত মহানগরীর উন্নয়নে ভাটা পড়ে।যদিও ২০১৬ সালে দায়িত্বে না থাকলেও এ স্বপ্ন তার প্রচেষ্টায় একনেকে অনুমোদন লাভ করে। ২০০৮--২০১৩ সালে ব্যাপকভাবে আাইল্যান্ডে গাছ লাগানো ফলে ১০১৬ সালে বৃটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় রাজশাহী শহর বিশ্বে কম ধুলিকনা মুক্ত ও নির্মল বায়ুর শহর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১০১৮ সালে আবারও নগর পিতা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে আবার উন্নয়ন চালিকা শুরু হয়।২০১৮সালে দায়িত্ব গ্রহনের পর মহানগরীর উন্নয়ন পরিকল্পনা হাত দিলেন। মহানগরীর সকল সেবা সংস্থাকে নিয়ে শহরের সমন্বিত উন্নয়ন যেন পরিকল্পিত ভাবে হয় সেজন্যে তিনি কয়েক মাস পর পর সে সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় ও পরামর্শ আদান প্রদান নিয়মিত চালু রাখলেন। এ ছাড়া দায়িত্ব গ্রহনের ১.৫বছরের মধ্যে ২০২০ সালের ১৮ই ফেব্রয়ারি রাজশাহী নগরীর উন্নয়নের সকল চাহিদা রাস্তা নির্মাণ, সৌন্দয বর্ধন, আলোকায়ন সম্বলিত মহানগরীর সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প ২৯৩১.৬১কোটি টাকা একনেকে অনুমোদন করিয়ে নগরবাসীর উন্নয়নের আশা পূরুন করলেন।
সিটি করপোরেশন উন্নয়নের পাশাপাশি সুপরিকল্পিতভাবে ভাবে বৃক্ষ রোপন ও রাস্তা মাঝে সুশোভিত ফুলের গাছ লাগানো শুরু করেন। ফলে রাজশাহী মহানগরী যেন সবুজ নগরী ও ফুলের নগরীতে পরিনত হলো। বিনিয়োগ কারীরা এশহরে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ শুরুর প্রতিযোগিতা নামলো। এ আবাসন খাতে দশ হাজার নির্মাণ শ্রমিক সহ অনেক পুরকৌশল প্রকৌশলী, স্হপতি কাজ করছে। গত পাঁচ বছরে কি হয়নি এশহরে তা এক কথায় বলা যাবে না। মহানগরীর যোগাযোগ ব্যবস্হার সকল রাস্তা প্রশস্তকরন সহ সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল,মাদ্রাসা, মসজিদ, গোরস্থান, ঈদগাহ দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। উচ্চশিক্ষার সকল প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,রুয়েট, মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল উন্নয়ন হয়েছে। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপনের ফলে ভবিষ্যতে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হবে। শিশু কিশোর দের মনোবিকাশের জন্য শেখ রাশেল পার্ক ও শহীদ কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার মান উন্নয়ন কাজ চলছে। এ ছাড়া শিশু হাসপাতাল ভবন নির্মাণ শেষের পথে।শহীদ কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেনের বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার স্হাপন প্রকল্প শেষের দিকে। হাইটেক পার্ক স্হাপনের ফলে মহানগরীতে বিশহাজার তরুণ তরুণীরা ফ্রি ল্যান্সিং কাজের বেকার সমস্যা দুর হয়েছে। চাহিদার শেষ নেই,মহানগরীর উন্নয়নের সাথে কর্মের যোগান সৃষ্টি হয়।আশার কথা আগামীতে এ শহরে দশটি ফ্রি ল্যান্সিং প্রশিক্ষণ সেন্টার স্হাপনের মাধ্যমে লক্ষ তরুণে স্বাবলন্বি হবার স্বপ্ন পুরুন হবে। আর এ স্বপ্ন পুরন একজনই করে চলেছেন তিনি হলেন তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পুরুষ মাননীয় নগর পিতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি আমাদের "দ্যা চেন্জমেকার অব রাজশাহী" হিসেবে বিবেচিত হয়ে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।

লেখক : নিজামুল হোদা
হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন

Post a Comment

1 Comments